Sunday, June 21, 2020

টেলিমেডিসিন- করোনা মহামারী কালের বাস্তবতা

পুরনো বা নতুন যে কোন স্বাস্হ্য সমস্যার জন্য টেলিমেডিসিন একটি আধুনিক সমাধান । করোনা মহামারীর এই সময়ে সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখা জরুরী। ডাক্তারের চেম্বারে বা হাসপাতালে ভিড করলে রোগীদের এবং ডাক্তার,  নার্স ও কর্মচারীদের সকলেরই করোনা ভাইরাস সংক্রমনের ঝুঁকি বাড়বেই ।গ্রামের বা দূর দূরান্তের রোগীদের এখন শহরে বা ঢাকায় এসে চিকিৎসা  করা কঠিন হয়ে পড়েছে। এই পরিস্থিতে টেলিমেডিসিনের সম্ভাবনা যাচাই করা দরকার।যে ভাবে টেলিমেডিসিন করা যায়:
—মোবাইল ফোন, ট্যাব, ল্যাপটপ দিয়ে ডাক্তারের সাথে কথা বলে বা লাইভ ভিডিও কল করে
—ল্যাব রিপোর্ট, আল্ট্রাসনোগ্রাম বা এক্স রে ছবি ডাক্তারের কাছে পাঠানো বা ডাক্তারের প্রেস্ক্রিপসন পাওয়ার সময় গোপনীয়তা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন টেলিমেডিসিন অ্যাপ ব্যবহার করে
—-বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের টেলিমেডিসিন সেবা চালু আছে। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বেলা ২ টা পর্যন্ত অন্যান্য বিভাগের মতো অবস এন্ড গাইনী বিভাগের রেসিডেন্ট, পোস্টগ্র্যাজুয়েট ডাক্তার, অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক বিভিন্ন পর্যায়ে অংশগ্রহন করে থাকেন।রিপ্রোডাক্টিভ এন্ডোক্রাইনোলজী এন্ড ইনফার্টিলিটি বিভাগের অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপকদের জন্য মাসে ৩-৪ দিন নির্ধারিত আছে। আমাদের রোগীরা বিএসএমএমইউ এর ওয়েবসাইট এর মাধ্যমে অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপকদের সাথে পরামর্শের জন্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিতে পারেন।
বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত উচ্চমধ্যবিত্ত পরিবারের প্রায় প্রতিটিতেই তরুণেরা আছেন যারা ইন্টারনেট বা ফেইসবুক এ অভ্যস্ত।বাড়ির মেয়েরা তাদের সাহায্য নিতে পারেন।বিএসএমএমইউ এর টেলিমেডিসিনের পর্যাপ্ত ব্যবহার রোগীরা করতে পারছেন না। অনভ্যস্ততাই এর মূল কারণ বলে মনে হয়।
বিশ্বব্যাপী আই ভি এফ , ল্যাপরোস্কোপী সহ বন্ধ্যাত্বের চিকিৎসা এখন নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে।গর্ভধারণ বিষয়ক জটিলতা হলে তা সামাল দেয়া কঠিন হবে।টেলিমেডিসিনে সম্পূর্ন চিকিৎসা দেয়া সম্ভব নয়।তবে চিকিৎসাসেবার একটা অংশ হলো কনসালটেসন বা চিকিৎসা পরামর্শ , যা দিয়ে রোগীর সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা যায়। রোগীরা ডাক্তারদের বিশ্বাস করেন। ডাক্তারদের সাথে কথা বলতে পারলেও রোগীদের উদ্বেগ উৎকন্ঠা অনেকাংশেই  প্রশমিত হতে পারে। রিপ্রোডাক্টিভ এন্ডোক্রাইনোলজী এন্ড ইনফার্টিলিটি বিভাগের রোগীদের অদূর ভবিষ্যতের বাস্তবতা বিবেচনায় টেলিমেডিসিন সেবা গ্রহণ করার জন্য অনুরোধ করছি।


Tuesday, February 12, 2019

জন্মনিয়ন্ত্রনের পদ্ধতি নিয়ে যত ভুল ধারনা


জন্মনিয়ন্ত্রন পদ্ধতি সমূহ সম্পর্কে বিশেষায়িত জ্ঞান রিপ্রোডাক্টিভ এন্ডোক্রাইনোলজির অন্তর্ভুক্ত।আমাদের দেশে এই পদ্ধতিগুলো সম্পর্কে কিছু ভুল ধারনা ও বিশ্বাস প্রচলিত আছে যার কারনে ব্যবহার শুরু করার কিছুদিনের মধ্যেই অনেক মহিলা তা বন্ধ করে দেন।

প্রচলিত ভুল ধারনাগুলো হচ্ছে: 
ক) পদ্ধতির কারনেই কেবল শরীরের ওজন বৃদ্ধি পায়।
খ) স্বাভাবিক মাসিক বন্ধ রাখলে বা নিয়ন্ত্রন করলে স্বাস্থ্যের ক্ষতি হয়।
গ) পদ্ধতি ব্যবহার করলে পরবর্তিতে বন্ধ্যাত্ব হতে পারে।
ঘ) পদ্ধতি ব্যবহারকালে গর্ভধারন  করলে বাচ্চার জন্মগত ত্রুটি বা অন্য কোন ক্ষতি হতে পারে।
ঙ) বিবাহিত নারীরা পদ্ধতি নিলে একসময় বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের আশঙ্কা থাকে।
চ) IUD বা IMPLANT শরীরে ধারন করলে তা রক্তে মিশে গিয়ে হারিয়ে যেতে পারে।

এসবই অমূলক ধারনা। এসব ধারনার কোন বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই।

জরায়ু অপসারন (hysterectomy) অপারেশনের কি বিকল্প নেই?

অতিরিক্ত মাসিক , মাসিকে ব্যথা প্রভৃতি কারনে প্রায়শ জরায়ু অপসারনের জন্য ডাক্তাররা পরামর্শ দিয়ে থাকেন। সন্তান ধারনের সময় বা দরকার না থাকলে জরায়ু অপসারন করা যায়।
তবে জরায়ু অপসারন অনেকে খুশিমনে মেনে নিতে পারেন না।অল্পবয়সে জরায়ু অপসারন করলে রক্ত সরবরাহ বিঘ্নিত হবার কারনে কয়েকবছরের মধ্যে ডিম্বাশয়ের কর্মক্ষমতা নষ্ট হয়ে যেতে পারে। হরমোনের অভাবে বয়স্ক মহিলাদের যে সমস্যাগুলো হতে পারে তা আরো অল্প বয়সে শুরু হয়।
অনিয়মিত মাসিক, অতিরিক্ত মাসিক, মাসিকের ব্যথা এই সমস্যা গুলো ঔষধের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রনে রাখা যায় অন্তত পরিণত বয়স বা মেনোপজ পর্যন্ত।বয়সের কারনে মাসিক বন্ধ হয়ে গেলে আর জরায়ু অপসারনের প্রয়োজন থাকে না।

Wednesday, January 30, 2019

Childless living বা সন্তানহীন জীবনের সাথে মানিয়ে নেয়া

বন্ধ্যাত্বের সাথে যুঝে হেরে যাওয়া দম্পতিদের দেখেছেন? এ তাদের স্বপ্নভঙ্গ, তাদের নিরন্তর অপূর্ণতাবোধ, হতাশা ও বিষাদের কারণ। বাইরে থেকে লোকজন তা বুঝতে পারেন না।তাদের ভুল ধারনা যে যাদের বাচ্চা নেই, তারা ইচ্ছে করেই বাচ্চা নেন না।
অনেকে, বিশেষ করে মেয়েরা বিশ্বাস করেন যে মাতৃত্বেই জীবনের মূল্য।সমাজ তাকে গণ্য করে যে সন্তানসমেত পারিবারিক জীবন যাপন করেন।প্রকৃত সত্য এই যে, সন্তান সন্ততি ব্যতিরেকেও অর্থবহ জীবনযাপন করা যায়।জগতের স্মরনীয় বরনীয় অনেকে তা করেছেন।সন্তান লালন পালনের জন্য যে সময় ও অর্থ ব্যয় হত, তা এখন দেয়া যায় লোকের মঙ্গলের জন্য, নিজের জীবনের আনন্দের জন্য।জীবনে আরো কত কি আছে যা সুখ শান্তি এনে দিতে পারে—প্রতিদিনকার কাজের জায়গা, যৌথ পরিবার, গরীব এতিম শিশুদের সাহায্যকারী সংগঠন, বন্ধুবান্ধব, সমাজসেবা, ভ্রমন করা, নিজের ইচ্ছে আবেগ পূরণ করা।
যখন ঠিক করলেন আর কোন চিকিৎসা নয়, তখন স্বপ্নভঙ্গের হতাশাকে পেছনে ফেলে এগিয়ে যান।জীবনের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গী পাল্টে ফেলুন।সন্তানহীন জীবন আপনার—পেছনে নয়, সামনে তাকিয়ে সুখের সাথে, নতুন মূল্যবোধের সাথে বাচুঁন।আপনার সাথে সম্পর্কিত অল্প কিছু মানুষ নয়—বরং পুরো পৃথিবীকে আপনার পরিবার বলে মেনে নিন।

Adoption (দত্তক নেয়া)

বাংলাদেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার হয়ে শিশুরা এতিম হয়। অভাব বা সামাজিক কারনে অনাকাঙ্খিত গর্ভধারনের পর গর্ভপাত করতে চান এ রকম মায়েরাও অনেক আছেন। এর বিপরীতে তাদের কথা চিন্তা করুন যারা একটি শিশুর মুখ দেখার জন্য কী না করছেন।বন্ধ্যাত্বের সাথে যুঝে হেরে যাওয়া এ সব দম্পতিদের জন্য adoption বা দত্তক নেয়ার প্রক্রিয়া সহজ করা গেলে অনেক সমস্যারই সুস্থ সমাধান হতো।
দত্তক শিশুর সামাজিক ও আইনগত স্বীকৃতি, বংশীয় নাম ও সম্পত্তির উত্তরাধিকার প্রশ্নে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গী পাশ্চাত্যের তুলনায় ভিন্ন।তবে গরীব ও এতিম শিশুদের সাহায্য করাকে ইসলামে বিশেষভাবে উৎসাহিত করা হয়।
www.alislam.org অনুযায়ী.....
১) adoption বা দত্তক নেয়ার ব্যাপারে ইসলামে অনুমতি আছে। তবে দত্তক শিশুর প্রকৃত মা বাবার সূত্রে পাওয়া নাম পরিচয় গোপন বা পরিবর্তন করা যাবে না।
২) যদি শিশুটি ২ বছর বা তার কম বয়সী হয় এবং শিশুটিকে পালক মা কর্তৃক স্তন্যপান করানো হয় ( একদিন একরাত অথবা পর পর ১৫ বার), তবে ঐ শিশু নতুন পরিবারে মাহরাম ( অর্থাৎ যার সামনে পর্দা করা লাগবে না) গন্য হবে।
৩) দত্তক বা পালিত সন্তান পালক বাবা মায়ের সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হবে না এবং প্রকৃত বাবা মার সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হবে।তবে পালক বাবা মা চাইলে তাদের সম্পত্তির এক তৃতীয়াংশ পর্যন্ত পালিত সন্তানের নামে লিখে দিতে পারেন।
উল্লেখ্য যে গর্ভধারন না করে স্তন্যদানে সক্ষম করার ব্যাপারে চিকিৎসকেরা সাহায্য করতে পারেন।
পরিতাপের বিষয় যে বাংলাদেশে adoption বা দত্তক নেয়ার ব্যাপারে প্রাতিষ্ঠানিক কোন ব্যবস্থা নেই।বিদেশে এমনকি পার্শ্ববর্তি দেশ ভারতেও এর ব্যবস্থা আছে। ২০১৩ সালে অল ইন্ডিয়া ইনিস্টিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্স এ আই ভি এফ সেন্টারে থাকাকালীন দেখেছি বন্ধ্যা দম্পতিদের এই বিষয়ে পরামর্শ দিতে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এখন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের দায়িত্বে আছেন।তাঁর কাছে আমার আবেদন অসহায় এতিম শিশু এবং অনাকাঙ্খিত গর্ভধারন কারী মহিলাদের সাথে দত্তক নিতে ইচ্ছুক দম্পতিদের যোগাযোগ   এর ব্যবস্থা করে adoption বা দত্তক নেয়ার প্রাতিষ্ঠানিক প্রক্রিয়া সহজ করা যদি সম্ভব হয়।

বন্ধ্যাত্বের চিকিৎসা কতখানি সফল?

প্রচলিত ব্যবস্থায় বন্ধ্যাত্বের কারণগুলো যে পুরোপুরি নির্নয় করা সম্ভব হয় তা নয়।অত্যাবশকীয় কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষার পর চিকিৎসা শুরু করা যায়। এক ধাপে সাফল্য  না এলে পরবর্তি ধাপে চিকিৎসা করা হয়- সে উচ্চতর ধাপে অতিরিক্ত কিছু ব্যয়, আরো কিছু ঝুঁকি থাকে।সর্বশেষ ধাপ হচ্ছে IVF (in vitro fertilization ), যা সর্বসাধারনের কাছে টেস্ট টিউব বেবী নামে পরিচিত।
অর্থসংকট, মানসিক ধৈর্যচ্যুতি বা অন্যান্য আনুষঙ্গিক কারণে অনেকে চিকিৎসা থেকে সরে যান। অর্থনৈতিক বা মানসিক চাপে যখন পেরে উঠতে পারেন না তখন আমরা তাদের পরামর্শ দেই, বিকল্প কোন উপায়ে শান্তি খুঁজে নিতে- যেমন বাচ্চা দত্তক নেয়া অথবা সন্তানহীন জীবনের সাথে মানিয়ে নেয়া।

Sunday, January 27, 2019

Gynae Endocrine বা হরমোনজনিত স্ত্রীরোগ কি?


PCOS : অনিয়মিত মাসিক, মুখে অতিরিক্ত লোম বা ব্রণ, মাত্রাতিরিক্ত মেদ, বন্ধ্যাত্ব প্রভৃতি লক্ষনযুক্ত PCOS ১২-১৮ শতাংশ মেয়েদের থাকে।

Amenorrhea: বয়োসন্ধি অতিক্রম করা সত্বেও যাদের মাসিক হয় না অথবা পরিণত বয়সের পূর্বে গর্ভধারন ব্যতীত অন্য কারনে যাদের মাসিক বন্ধ থাকে।

Premature Ovarian Failure: চল্লিশ বছর বয়সের আগে ডিম্বাশয়ের ক্ষমতা অস্বাভাবিকভাবে কমে যাবার কারনে মাসিক বন্ধ হয়ে যেতে পারে বা বন্ধ্যাত্ব হতে পারে।এ রোগের সাথে রোগীর দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্যঝুঁকি রয়েছে।

Thyroid disorders: থাইরয়েড গ্রন্থির স্বাভাবিক নিসরণ হ্রাস বা বৃদ্ধির কারণে মাসিকের অনিয়ম বা বন্ধ্যাত্ব হতে পারে।দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য ঝুঁকি রেয়েছে।

Hyperprolactinaemia: পিটুইটারী গ্রন্থি হতে অতিরিক্ত প্রোল্যাকটিন হরমোন নিসরণ মাসিকের অনিয়ম বা বন্ধ্যাত্বের কারন। এরও দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্যঝুঁকি আছে।

Disorders of Sexual Development: জন্মগত কারণে নারী বা পুরুষ লিঙ্গ নির্ধারনে সমস্যা হতে পারে।মেয়েদের শরীরে অ্যান্ড্রোজেন হরমোনের আধিক্য অথবা পুরুষের শরীরে অ্যান্ড্রোজেন হরমোনের স্বল্পতা বা নিষ্ক্রিয়তা এর মূল কারণ।

Abnormal growth and pubertal development: বয়োসন্ধিতে মেয়েদের শরীরে স্বাভাবিক যে পরিবর্তন বা শারীরিক বৃদ্ধি ঘটে তা যদি যথাসময়ে না হয় তবে তার কারণ হতে পারে জন্মগত বা অস্বাভাবিক হরমোন নিসরণ।