Wednesday, January 30, 2019

Childless living বা সন্তানহীন জীবনের সাথে মানিয়ে নেয়া

বন্ধ্যাত্বের সাথে যুঝে হেরে যাওয়া দম্পতিদের দেখেছেন? এ তাদের স্বপ্নভঙ্গ, তাদের নিরন্তর অপূর্ণতাবোধ, হতাশা ও বিষাদের কারণ। বাইরে থেকে লোকজন তা বুঝতে পারেন না।তাদের ভুল ধারনা যে যাদের বাচ্চা নেই, তারা ইচ্ছে করেই বাচ্চা নেন না।
অনেকে, বিশেষ করে মেয়েরা বিশ্বাস করেন যে মাতৃত্বেই জীবনের মূল্য।সমাজ তাকে গণ্য করে যে সন্তানসমেত পারিবারিক জীবন যাপন করেন।প্রকৃত সত্য এই যে, সন্তান সন্ততি ব্যতিরেকেও অর্থবহ জীবনযাপন করা যায়।জগতের স্মরনীয় বরনীয় অনেকে তা করেছেন।সন্তান লালন পালনের জন্য যে সময় ও অর্থ ব্যয় হত, তা এখন দেয়া যায় লোকের মঙ্গলের জন্য, নিজের জীবনের আনন্দের জন্য।জীবনে আরো কত কি আছে যা সুখ শান্তি এনে দিতে পারে—প্রতিদিনকার কাজের জায়গা, যৌথ পরিবার, গরীব এতিম শিশুদের সাহায্যকারী সংগঠন, বন্ধুবান্ধব, সমাজসেবা, ভ্রমন করা, নিজের ইচ্ছে আবেগ পূরণ করা।
যখন ঠিক করলেন আর কোন চিকিৎসা নয়, তখন স্বপ্নভঙ্গের হতাশাকে পেছনে ফেলে এগিয়ে যান।জীবনের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গী পাল্টে ফেলুন।সন্তানহীন জীবন আপনার—পেছনে নয়, সামনে তাকিয়ে সুখের সাথে, নতুন মূল্যবোধের সাথে বাচুঁন।আপনার সাথে সম্পর্কিত অল্প কিছু মানুষ নয়—বরং পুরো পৃথিবীকে আপনার পরিবার বলে মেনে নিন।

Adoption (দত্তক নেয়া)

বাংলাদেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার হয়ে শিশুরা এতিম হয়। অভাব বা সামাজিক কারনে অনাকাঙ্খিত গর্ভধারনের পর গর্ভপাত করতে চান এ রকম মায়েরাও অনেক আছেন। এর বিপরীতে তাদের কথা চিন্তা করুন যারা একটি শিশুর মুখ দেখার জন্য কী না করছেন।বন্ধ্যাত্বের সাথে যুঝে হেরে যাওয়া এ সব দম্পতিদের জন্য adoption বা দত্তক নেয়ার প্রক্রিয়া সহজ করা গেলে অনেক সমস্যারই সুস্থ সমাধান হতো।
দত্তক শিশুর সামাজিক ও আইনগত স্বীকৃতি, বংশীয় নাম ও সম্পত্তির উত্তরাধিকার প্রশ্নে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গী পাশ্চাত্যের তুলনায় ভিন্ন।তবে গরীব ও এতিম শিশুদের সাহায্য করাকে ইসলামে বিশেষভাবে উৎসাহিত করা হয়।
www.alislam.org অনুযায়ী.....
১) adoption বা দত্তক নেয়ার ব্যাপারে ইসলামে অনুমতি আছে। তবে দত্তক শিশুর প্রকৃত মা বাবার সূত্রে পাওয়া নাম পরিচয় গোপন বা পরিবর্তন করা যাবে না।
২) যদি শিশুটি ২ বছর বা তার কম বয়সী হয় এবং শিশুটিকে পালক মা কর্তৃক স্তন্যপান করানো হয় ( একদিন একরাত অথবা পর পর ১৫ বার), তবে ঐ শিশু নতুন পরিবারে মাহরাম ( অর্থাৎ যার সামনে পর্দা করা লাগবে না) গন্য হবে।
৩) দত্তক বা পালিত সন্তান পালক বাবা মায়ের সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হবে না এবং প্রকৃত বাবা মার সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হবে।তবে পালক বাবা মা চাইলে তাদের সম্পত্তির এক তৃতীয়াংশ পর্যন্ত পালিত সন্তানের নামে লিখে দিতে পারেন।
উল্লেখ্য যে গর্ভধারন না করে স্তন্যদানে সক্ষম করার ব্যাপারে চিকিৎসকেরা সাহায্য করতে পারেন।
পরিতাপের বিষয় যে বাংলাদেশে adoption বা দত্তক নেয়ার ব্যাপারে প্রাতিষ্ঠানিক কোন ব্যবস্থা নেই।বিদেশে এমনকি পার্শ্ববর্তি দেশ ভারতেও এর ব্যবস্থা আছে। ২০১৩ সালে অল ইন্ডিয়া ইনিস্টিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্স এ আই ভি এফ সেন্টারে থাকাকালীন দেখেছি বন্ধ্যা দম্পতিদের এই বিষয়ে পরামর্শ দিতে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এখন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের দায়িত্বে আছেন।তাঁর কাছে আমার আবেদন অসহায় এতিম শিশু এবং অনাকাঙ্খিত গর্ভধারন কারী মহিলাদের সাথে দত্তক নিতে ইচ্ছুক দম্পতিদের যোগাযোগ   এর ব্যবস্থা করে adoption বা দত্তক নেয়ার প্রাতিষ্ঠানিক প্রক্রিয়া সহজ করা যদি সম্ভব হয়।

বন্ধ্যাত্বের চিকিৎসা কতখানি সফল?

প্রচলিত ব্যবস্থায় বন্ধ্যাত্বের কারণগুলো যে পুরোপুরি নির্নয় করা সম্ভব হয় তা নয়।অত্যাবশকীয় কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষার পর চিকিৎসা শুরু করা যায়। এক ধাপে সাফল্য  না এলে পরবর্তি ধাপে চিকিৎসা করা হয়- সে উচ্চতর ধাপে অতিরিক্ত কিছু ব্যয়, আরো কিছু ঝুঁকি থাকে।সর্বশেষ ধাপ হচ্ছে IVF (in vitro fertilization ), যা সর্বসাধারনের কাছে টেস্ট টিউব বেবী নামে পরিচিত।
অর্থসংকট, মানসিক ধৈর্যচ্যুতি বা অন্যান্য আনুষঙ্গিক কারণে অনেকে চিকিৎসা থেকে সরে যান। অর্থনৈতিক বা মানসিক চাপে যখন পেরে উঠতে পারেন না তখন আমরা তাদের পরামর্শ দেই, বিকল্প কোন উপায়ে শান্তি খুঁজে নিতে- যেমন বাচ্চা দত্তক নেয়া অথবা সন্তানহীন জীবনের সাথে মানিয়ে নেয়া।

Sunday, January 27, 2019

Gynae Endocrine বা হরমোনজনিত স্ত্রীরোগ কি?


PCOS : অনিয়মিত মাসিক, মুখে অতিরিক্ত লোম বা ব্রণ, মাত্রাতিরিক্ত মেদ, বন্ধ্যাত্ব প্রভৃতি লক্ষনযুক্ত PCOS ১২-১৮ শতাংশ মেয়েদের থাকে।

Amenorrhea: বয়োসন্ধি অতিক্রম করা সত্বেও যাদের মাসিক হয় না অথবা পরিণত বয়সের পূর্বে গর্ভধারন ব্যতীত অন্য কারনে যাদের মাসিক বন্ধ থাকে।

Premature Ovarian Failure: চল্লিশ বছর বয়সের আগে ডিম্বাশয়ের ক্ষমতা অস্বাভাবিকভাবে কমে যাবার কারনে মাসিক বন্ধ হয়ে যেতে পারে বা বন্ধ্যাত্ব হতে পারে।এ রোগের সাথে রোগীর দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্যঝুঁকি রয়েছে।

Thyroid disorders: থাইরয়েড গ্রন্থির স্বাভাবিক নিসরণ হ্রাস বা বৃদ্ধির কারণে মাসিকের অনিয়ম বা বন্ধ্যাত্ব হতে পারে।দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য ঝুঁকি রেয়েছে।

Hyperprolactinaemia: পিটুইটারী গ্রন্থি হতে অতিরিক্ত প্রোল্যাকটিন হরমোন নিসরণ মাসিকের অনিয়ম বা বন্ধ্যাত্বের কারন। এরও দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্যঝুঁকি আছে।

Disorders of Sexual Development: জন্মগত কারণে নারী বা পুরুষ লিঙ্গ নির্ধারনে সমস্যা হতে পারে।মেয়েদের শরীরে অ্যান্ড্রোজেন হরমোনের আধিক্য অথবা পুরুষের শরীরে অ্যান্ড্রোজেন হরমোনের স্বল্পতা বা নিষ্ক্রিয়তা এর মূল কারণ।

Abnormal growth and pubertal development: বয়োসন্ধিতে মেয়েদের শরীরে স্বাভাবিক যে পরিবর্তন বা শারীরিক বৃদ্ধি ঘটে তা যদি যথাসময়ে না হয় তবে তার কারণ হতে পারে জন্মগত বা অস্বাভাবিক হরমোন নিসরণ।

Endometriosis or Chocolate cyst


এন্ডোমেট্রিওসিস রোগ হয় যখন জরায়ুর আভ্যন্তরীন ঝিল্লী বা এন্ডোমেট্রিয়ামের মতো টিস্যু তলপেটের অন্যান্য অঙ্গের গায়ে লেগে থাকে ও বৃদ্ধি পায়। প্রতিমাসে মাসিকের সময় যেমন জরায়ুর অভ্যন্তর হতে রক্তস্রাব হয়, তেমন এন্ডোমেট্রিওসিস হতেও রক্তপাত হয়।এতে তলপেটের অঙ্গ সমূহে প্রদাহ ও ক্ষত সৃষ্টি হয় এবং অঙ্গসমূহের স্বাভাবিক পারস্পরিক বিন্যাস নষ্ট হয়ে যায়।

এন্ডোমেট্রিওসিস এর উপসর্গ কি?
অনেক মহিলার শরীরে এন্ডোমেট্রিওসিস থাকলেও বাইরে কোন উপসর্গ থাকে না।সাধারন উপসর্গের মধ্যে আছে মাসিকের ব্যথা, তলপেটের ব্যথা, সংগমকালীন ব্যথা ও বন্ধ্যাত্ব।

কিভাবে এন্ডোমেট্রিওসিস রোগ নির্নয় করা হয়?
উপসর্গ সমূহ হতে এন্ডোমেট্রিওসিস রোগের উপস্থিতি সম্পর্কে সন্দেহ করা যায়, তবে নিশ্চিতভাবে রোগনির্নয়ের জন্য সার্জারী, যেমন ল্যাপারোস্কোপি বা ল্যাপারোটমির প্রয়োজন হয়।আল্ট্রাসনোগ্রাফি বা এম আর আই এর মাধ্যমে কখনো কখনো এন্ডোমেট্রিওসিস ধরা পরে।

কিভাবে এন্ডোনেট্রিওসিস চিকিৎসা করা হয়?
রোগীর বয়স, উপসর্গের তীব্রতা, গর্ভধারনের প্রয়োজনীয়তা প্রভৃতি বিষয় বিবেচনা করে চিকিৎসা পদ্ধতি নির্ধারন করা হয়।বিভিন্ন মেয়াদে খাওয়ার ঔষধ বা ইনজেকশন এবং / অথবা বিভিন্ন ধরনের সার্জারীর মাধ্যমে এন্ডোমেট্রিওসিসের চিকিৎসা করা হয়।

চিকিৎসার পরও কি এন্ডোমেট্রিওসিস হতে পারে?
যে সব রোগী এন্ডোমেট্রিওসিস এর জন্য সার্জারী বা অপারেশন করেন এবং অন্তত ৬ মাস ঔষধ বা ইনজেকশনের চিকিৎসা নেন, তাদের প্রায় ৫০ শতাংশ ৫-১০ বছরের মধ্যে পুনরায় এন্ডোমেট্রিওসিস জনিত ব্যথা অনুভব করেন।এন্ডোমেট্রিওসিস  একটি দীর্ঘমেয়াদী সমস্যা যার দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসা ও পরামর্শের প্রয়োজন।

Polycystic Ovary Syndrome (PCOS)

PCOS রোগীদের যে সমস্যাগুলো থাকে, তার মধ্যে আছে অনিয়মিত মাসিক বা অনেকদিন (৩৫ দিনের বেশী) পর পর মাসিক হওয়া, শরীরে লোমের আধিক্য, ব্রনের প্রকোপ, মাত্রাতিরিক্ত মেদ বা স্থুলতা, প্রজননক্ষমতা কমে যাওয়া, মানসিক অস্থিরতা এবং ডায়াবেটিস, হৃদরোগ ও জরায়ুর ক্যান্সারের ঝুঁকি বৃদ্ধি পাওয়া।
PCOS একটি জটিল সমস্যা যাতে একজন মহিলার ডিম্বাশয়ের আকার  সাধারনের চেয়ে বেশী হয়। পলিসিস্টিক শব্দের অর্থ হচ্ছে ডিম্বাশয়ে অনেক সিস্ট বা ফলিকল আছে।এই ফলিকল গুলো খুব কম ক্ষেত্রে ভ্রূণে নিষিক্ত হবার  উপযোগী ডিম্বানুতে পরিণত হয়।
বাচ্চা হয় না এরকম মহিলাদের মাঝে PCOS একটি সাধারণ সমস্যা।পনের থেকে পয়তাল্লিশ বছর বয়সের মহিলাদের মাঝে PCOS এর প্রকোপ ১২-১৮ শতাংশ।
PCOS একটি হরমোনজনিত সমস্যা। PCOS রোগীদের শরীরে উচ্চমাত্রার ইনসুলিন ও অ্যানড্রোজেন থাকে।কি কারণে এরকম হয় তা জানা যায়নি।কোন কোন ক্ষেত্রে PCOS বংশগত।হরমোনের সমস্যা বৃদ্ধি পায় যখন শরীরে মাত্রাতিরিক্ত মেদ জমে।
PCOS এর কিছু দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্যঝুঁকি রয়েছে।যে সব মহিলার অতিরিক্ত ওজন তাদের ডায়াবেটিস ও হৃদরোগ হবার ঝুঁকি আছে।যাদের অনেকদিন ধরে অনিয়মিত মাসিক হয় তাদের জরায়ুর ক্যান্সারের ঝুঁকি সামান্য বৃদ্ধি পায়।একারনে PCOS রোগীদের রোগ যত দ্রূত নির্নয় করা যায় ততই মঙ্গল।এতে তাদের উপসর্গগুলো নিয়ন্ত্রন করা সহজ হয় এবং দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্যঝুঁকি গুলো প্রতিরোধ করা যায়।
PCOS রোগ নির্নয়ের জন্য প্রয়োজন রোগের ইতিহাস, শারীরিক পরীক্ষা (আল্ট্রাসনোগ্রামসহ),  হরমোনসমূহের মাত্রা দেখার জন্য রক্তের পরীক্ষা।
সমস্যা অনুযায়ী PCOS এর চিকিৎসা বিভিন্ন ধরনের হতে পারে যেমন খাওয়া দাওয়ার ধরন সহ জীবনধারার পরিবর্তন, ওজন কমানো, হরমোন জাতীয় ঔষধ দিয়ে চিকিৎসা প্রভৃতি।গবেষণায় দেখা গেছে যাদের ওজন বেশী, ৫-১০ শতাংশ ওজন কমালে তাদের তাদের হরমোন মাত্রা স্বাভাবিক হয়ে আসে, মাসিক নিয়মিত হয় এবং প্রজনন ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
যদি একজন PCOS মহিলার একটি বা দুটি উপসর্গের চিকিৎসা করা হয়,তবে তার দীর্ঘমেয়াদী সমস্যাগুলোর কোন সমাধান হয় না। প্রকৃত পক্ষে PCOS একটি আমৃত্যু সমস্যা যার দীর্ঘমেয়াদী সমাধান প্রয়োজন। 

Laparoscopy কি এবং কেন?

ল্যাপারোস্কোপি গাইনী ও বন্ধ্যাত্ব চিকিৎসায় প্রয়োজনীয় একটি অপারেশন। ল্যাপারোস্কোপি করে বন্ধ্যাত্ব বা তলপেটে ব্যথার কারণ নির্নয় করা যায়, endometriosis ও adhesion রোগ নির্নয় এবং এ সংক্রান্ত অপারেশন করা যায়।
বন্ধ্যাত্ব চিকিৎসায় ল্যাপারোস্কোপির বিকল্প বা ল্যাপারোস্কোপির চেয়ে কম কার্যকর পদ্ধতি হচ্ছে Hysterosalpingography  or Saline Infusion Sonography.

ল্যাপারোস্কোপি কিভাবে করা হয়?
ল্যাপারোস্কোপির জন্য রোগীকে সম্পূর্ন অজ্ঞান করা হয়।রোগীর পেট গ্যাস দ্বারা স্ফীত করে নেয়া হয়। নাভীর কাছাকাছি ২-৩ সেমি ছিদ্র করে ক্যামেরা আর আলো প্রবেশ করানো হয়, আরো ১-৩টা ছিদ্র করা হয় অপারেশনের যন্ত্রপাতি ঢোকানোর জন্য। পেটের ভেতর দেখে সমস্যা বের করা হয় এবং সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হয়।


Saturday, January 26, 2019

IVF ( In vitro fertilization)


বন্ধ্যাত্ব চিকিৎসার শেষ ধাপ IVF ( In vitro fertilization). বিশ্বের মানসম্পন্ন সেন্টার গুলোতে IVF এর সাফল্যের হার ৩০-৪০ শতাংশ। তবে এই পদ্ধতি সময়সাপেক্ষ, ব্যয়সাধ্য এবং ঝুঁকিপূর্ন।
এই পদ্ধতিতে পর্যায়ক্রমে 
উচ্চমাত্রার ইনজেকশন দেয়া হয় প্রতিদিন এবং বারে বারে আল্ট্রাসাউন্ড করে দেখা হয় ডিম্বানুর বৃদ্ধি আশানুরূপ হচ্ছে কিনা।
ডিম্বানু পরিণত হলে ছোট অপারেশনের মাধ্যমে ডিম্বাশয় থেকে তা সংগ্রহ করা হয়।
শরীরের বাইরে আই ভি এফ ল্যাব এ সংগৃহীত ডিম্বানুকে স্বামীর শুক্রানু দ্বারা নিষিক্ত করা হয়।
ইনকিউবেটরে নিষিক্ত ডিম্বানু হতে ভ্রূণ তৈরী হয়।
এক বা একাধিক ভ্রূণ জরায়ুতে প্রতিস্থাপন করা হয়।
শেষ পর্যন্ত একটা সুস্থ বাচ্চার জন্ম হবে কিনা তা মায়ের  বয়স  ও বন্ধ্যাত্বের কারন সহ আরো অনেক বিষয়ের উপর নির্ভর করে।

IUI (Intrauterine insemination)

বন্ধ্যাত্ব চিকিৎসার একটি উচ্চতর ধাপ হচ্ছে Intra uterine insemination, সংক্ষেপে I U I. এই প্রক্রিয়ায় পর্যায়ক্রমে
ঔষধ ও ইনজেকশন দেওয়া হয় এবং ডিম্বানুর বৃদ্ধি আশানুরূপ হচ্ছে কিনা তা বারে বারে আল্ট্রাসাউন্ড করে দেখা হয়।
ডিম্বানু পরিণত হলে তা অবমুক্ত করার জন্য ইনজেকশন দেয়া হয়।
৩৬ ঘন্টা পর স্বামীর বীর্য সংগ্রহ করে প্রক্রিয়াজাত করা হয় যাতে অ্যালার্জি বা তলপেটে ব্যথা করতে পারে এরকম ক্ষতিকর উপাদান অপসারিত হয় এবং সক্রিয় ও সুস্থ শুক্রানুর ঘনত্ব বৃদ্ধি পায়।
প্রক্রিয়াজাত বীর্য একটি ছোট, পাতলা ও নরম বিশেষ ক্যাথিটারের মাধ্যমে জরায়ুতে প্রবেশ করানো হয়। এতে তেমন সময় লাগে না, বিশেষ ব্যথাও অনুভব হয় না।
প্রতি IUI cycle এ সাফল্যের হার ১০ শতাংশ। একজন দম্পতি ৩-৬ বার IUI করতে পারেন।রোগীভেদে প্রতি IUI cycle এ ১০-২০ হাজার টাকা খরচ হয়।

বন্ধ্যাত্ব কখন এবং কেন?

যখন স্বামী স্ত্রী পূর্ন এক বছর স্বাভাবিক দাম্পত্য জীবন যাপনের পরও তাদের সন্তান সম্ভাবনা হয় না, তখন আমরা তাদের পরীক্ষা নিরীক্ষার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করি। পরীক্ষা নিরীক্ষার পর যে কারনগুলো জানা যায় তাতে আনুমানিক স্ত্রীর সমস্যা ৩০ শতাংশ, স্বামীর সমস্যা ৩০ শতাংশ, স্বামী-স্ত্রী উভয়ের সমস্যা ২০ শতাংশ, কোন সমস্যা পাওয়া যায় না ২০ শতাংশ।
স্ত্রীর সমস্যাগুলোর মধ্যে রয়েছে ডিম্বানু না হওয়া, ডিম্বনালী যার মাধ্যমে ডিম্বানু ও শুক্রানু মিলিত হয়ে ভ্রূণ তৈরী হয় তা ব্লক হয়ে যাওয়া বা তার কার্যক্ষমতা নষ্ট হওয়া, ইনফেকশন বা অন্য কোন কারনে তলপেটের অঙ্গসমূহ যেমন জরায়ু, ডিম্বনালী, ডিম্বাশয় প্রভৃতির কার্যক্ষমতা বা পারস্পরিক সুবিধাজনক অবস্থান বিনষ্ট হওয়া, জরায়ু অর্থাৎ ভ্রূণের প্রতিস্থাপন বা বৃদ্ধির যে জায়গা তাতে সমস্যা হওয়া, জরায়ুর মুখ যার মাধ্যমে শুক্রানু প্রবেশ করে তাতে সমস্যা।
স্বামীর সমস্যাগুলো হচ্ছে বীর্যে শুক্রানু না থাকা বা কম থাকা, শুক্রানুর নিষ্ক্রিয়তা, শুক্রাণুর অস্বাভাবিক গঠন, যৌন দূর্বলতা।
যখন কোন কারণ পাওয়া যায় না তখন এ রকম ভাবার কোন অবকাশ নেই যে অপেক্ষা করে থাকলে একসময় বাচ্চা আসবে। হয়তো কোন গুরুতর কারণ আছে যা প্রচলিত পরীক্ষা নিরীক্ষায় ধরা যায় নাই।চিকিৎসার চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে ধাপে ধাপে।

Tuesday, January 22, 2019

আশা নিরাশার দোলাচলে.....

বিয়ের পরপরই অনেক দম্পতি বাচ্চার জন্য অস্থির হন।এ প্রবণতা দেখা যায় বিশেষ করে যখন স্বামী বিদেশ প্রবাসী হন। তারা জানেন না যে সুস্থ কোন দম্পতি স্বাভাবিক দাম্পত্য জীবন করলে সন্তান সম্ভাবনার হার প্রথম ৬ মাসে প্রায় ৫০ শতাংশ, প্রথম ১ বছরে প্রায় ৮৫ শতাংশ, পরবর্তি ১ বছরে আরো ৫ শতাংশ। কোন জন্মনিয়ন্ত্রন পদ্ধতি ব্যবহার না করে, ১ বছর সুস্থ স্বাভাবিক দাম্পত্য জীবনের পরেও যদি সন্তান সম্ভাবনা না হয়, তবেই আমরা  পরীক্ষা নিরীক্ষা শুরু করি।
স্বাভাবিক দাম্পত্য জীবনরত কোন দম্পতির প্রতি মাসে সন্তান সম্ভাবনার হার প্রায় ২০ শতাংশ। আমরা প্রতি মাসে   যখন কোন বন্ধ্যাত্বের চিকিৎসা দেই, এই ২০ শতাংশের কাছাকাছি যাবার চেষ্টা করি।কাজেই চিকিৎসা করা হলেও এর অতিরিক্ত আশা করা অমূলক।
তবে কোন দম্পতি যদি টানা ৩ বছর স্বাভাবিক দাম্পত্য জীবনের পরেও সন্তান সম্ভাবনা না দেখেন, তবে তাদের গুরুতর কোন সমস্যা থাকতে পারে।অনর্থক সময় নষ্ট না করে চিকিৎসকের শরনাপন্ন হওয়া তাদের জন্য যথার্থ হবে।

বন্ধ্যাত্ব কি অভিশাপ?

সমাজ ও সংসারের নিয়মে বিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ন ঘটনা। বিয়ের পর মেয়েদের মা হতে হবে এও নিয়মের মধ্যে পরে।যখন এর অন্যথা হয় তখনই তাকে নানা প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়। জীবন যেন সেখানেই থেমে যায়।
আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে, অধিকাংশ মেয়েদের জীবন যেন জীবনই নয় যদি সে সংসারে মা হতে না পারে।প্রতিদিন এ ধরনের মেয়েদের সাথে কথা বলতে বলতে আমরা তাদের দুর্বিষহ জীবনের কিছুটা আঁচ পাই।বন্ধ্যাত্ব, সে স্বামীর কারনে হলেও, সবসময় সমাজ মেয়েটির দিকেই আঙ্গুল তুলে।
আমাদের সমাজে সে দিন কি কখনো আসবে যে দিন সবাই বুঝবে যে মা না হয়েও একটা মেয়ের মানুষ হিসেবে বাঁচবার, অন্য অনেক কিছু করে দেখাবার অধিকার আছে?

রিপ্রোডাকটিভ এন্ডোক্রাইনোলজী এন্ড ইনফার্টিলিটি , বিএসএমএমইউ

অবস গাইনী বিভাগের পৃথক উইং হিসেবে কাজ শুরু করে ২০০৪ সনে,
সতন্ত্র বিভাগ হিসেবে স্বীকৃতি পায় ২০১৮ সনে ।
বর্তমানে শিক্ষক ও মেডিকেল অফিসার সহ FCPS (Obgyn) fellow অনেকে রয়েছেন ;
Reproductive Endocrinology & Infertility তে উন্নত FCPS ডিগ্রী অর্জনের জন্য যে সব fellow ইচ্ছুক , তাদের ট্রেনিং সেন্টার হিসেবে BSMMU এর Reproductive Endocrinology & Infertility Dept Bangladesh College of Physicians & Surgeons কর্তৃক স্বীকৃত।গত কয়েক বছর ধরে Reproductive Endocrinology & Infertility MS residency program এর ছাত্রছাত্রী ভর্তি করা হয়েছে।
যে রোগীদের সেবা দেয়া হয়:
যে সব দম্পতি সন্তান ধারনে অক্ষম স্বামী স্ত্রী উভয়ের পরীক্ষা নিরীক্ষা করে তার কারণ নির্নয় করার চেষ্টা করা হয় এজন্য laparoscopy hysteroscopy এর মতো বিশেষ ধরনের অপারেশন করারও প্রয়োজন হয় ।
ডিম্বানু তৈরী না হওয়ার কারনগুলো নির্নয় করা এবং চিকিৎসা প্রদান করা যাতে গর্ভধারন সহজতর হয়, ডিম্বানু পরীক্ষার জন্য আল্ট্রাসাউন্ড করা হয় ।
যে সকল দম্পতি মা বাবা হতে চান তাদের পরামর্শ ( preconceptional counseling) প্রদান করা হয় ।এতে মায়ের কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষা করে যথাযথ পরামর্শ দেওয়া হয় । মা ও গর্ভস্থ ভ্রুণের ভবিষ্যৎ সুস্থতার জন্য এর দরকার আছে । ক্ষেত্রবিশেষে গর্ভজাত শিশুর কিছু জটিলতাও প্রতিরোধ করা যায় preconceptional counseling এর মাধ্যমে ।
হরমোনজনিত স্ত্রীরোগ (polycystic ovary syndrome)
মাসিকের সমস্যা যেমন অনিয়মিত মাসিক, মাসিকে ব্যথা, মাসিক না হওয়া)
বন্ধ্যাত্বের সাথে সম্পর্কিত তলপেট ও জরায়ুর সমস্যা ( endometriosis,adenomyosis, fibroid) এর জরায়ু অপসারন না করে চিকিৎসা প্রভৃতি।
বিগত বছরগুলোতে REI outdoor এ রোগীর সংখ্যা উত্তোরোত্তর বৃদ্ধি পেয়েছে।বর্তমানে প্রতিদিন ৬০-৭০ জন রোগী দেখা হয়।
২০১৪ সাল থেকে ৪টি স্পেশাল ক্লিনিক চালু রয়েছে।যেমন PCOS clinic, Endometriosis clinic, Male
infertility clinic, Gynae endocrine clinic . বন্ধ্যাত্বের সাথে সম্পর্কিত এই রোগের জন্য দীর্ঘমেয়াদী শারীরিক ও মানসিক সমস্যা হতে পারে।স্পেশাল ক্লিনিকগুলোতে সংশ্লিষ্ট রোগীদের চিকিৎসা ও  পরামর্শ দানের পাশাপাশি গবেষনার তথ্য উপাত্ত সংগ্রহের সুযোগ হয়।
Department এর Andrology Lab এ semen analysis করা হয়। নিয়মিত IUI ( Intrauterine insemination) করা হয়। আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী IUI এর সাফল্য প্রতিবারে ১০-১৫ শতাংশ। প্রতিমাসে একবার করে এক দম্পতি ৩-৬ বার IUI করতে পারেন। প্রতি IUI cycle এ ব্যয় ১২-১৫ হাজার টাকা ( রোগীভেদে বিভিন্ন ঔষধ ও ইনজেকশন এবং semen preparation এর খরচ একসাথে হিসেব করে)। সাফল্যের হার আন্তর্জাতিক মানের চেয়ে কম (প্রায় ১০ শতাংশ)। এর কারন হিসেবে বলা যায় আমরা সেই সব দম্পতির IUI করি যাদের সত্যিকার অর্থে IVF প্রয়োজন কিন্তু আর্থিক সংকট বা অন্যান্য কারনে IVF করেন না। আমরা donor sperm দিয়ে IUI করি না যা বিদেশী সেন্টারগুলোতে প্রায়শ হয়ে থাকে।
এখানে একটি IVF সেন্টার আছে।ন্যুনতম যন্ত্রপাতি ও ভৌত অবকাঠামো নিয়ে শুরু করার পর এই সেন্টারে কয়েকটি ব্যাচের IVF করা হয়েছে। ইনজেকশন শুরু করলেও সব দম্পতি ovum pick up and embryo transfer পর্যন্ত যেতে পারেন নি। Pregnancy or live birth হয় নাই। The IVF success is as good as the IVF lab. আমাদের  ক্ষেত্রে একটি মানসম্পন্ন IVF lab স্থাপন এবং embryo culture এর জন্য অপরিহার্য দূষনমুক্ত পরিবেশ ও ল্যাবের গুনগতমান বজায় রাখার পক্ষে অনেক বাধা আছে। একারনে IVFএর সাফল্য এখানে আশানুরূপ নয়।
একটি IVF cycle এর সেন্টার চার্জ একলক্ষ পাঁচ হাজার টাকা।আমাদের এখানে সেবা নিতে আসা দম্পতিদের মাসিক আয় প্রায়শ ক্ষেত্রে মাসিক ৩০,০০০ টাকার বেশী নয়।যে পদ্ধতিতে সাফল্যের হার ৩০ শতাংশের বেশী নয়, সেক্ষেত্রে এত টাকা খরচ করা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। তখন তারা দত্তক নেয়া, বা সন্তানহীন জীবনের সাথে মানিয়ে নেয়া ( এমনকি নতুন বিয়ে করা) প্রভৃতি বিকল্প উপায়ের কথা চিন্তা করেন।যারা রাজী হন তাদের অধিকাংশ শুক্রানুজনিত সমস্যা, যাদের IVF with ICSI প্রয়োজন। ICSI এর ব্যবস্থা এখানে নাই।
যে সব দম্পতি আমাদের কাছে সেবা নিতে আসেন তারা সাধারন নিম্ন বা মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষ।বন্ধ্যাত্বের জন্য স্বল্প খরচে বিশেষায়িত ও সুশৃংখল সেবা তারা আমাদের কাছে পেয়ে থাকেন।এদের অনেকেই বাইরে সহজ ও স্বল্প ব্যয়ের চিকিৎসা পদ্ধতিতে সন্তানধারনের চেষ্টা করেছেন। আমরা তাদের বন্ধ্যাত্বের কারন নির্নয় করি।এমন কারন যযার সঠিক চিকিৎসায় ব্যয় ও ঝুঁকি দুই-ই বেশী।আমরা সবাইকে সাফল্য দিতে পারি না।তবে তাদের একটা ব্যাপারে সাহায্য করতে পারি, তা হলো তাদের প্রকৃত অবস্থান সম্পর্কে জানানে যাতে তারা সাধ্য ও সামর্থ্য অনুযায়ী  এই অবস্থার সাথে নিজেদের মানিয়ে নিতে পারে।  

Saturday, January 19, 2019

Clinical problems consulted with REI at BSMMU

Reproductive Endocrinology & Infertility , BSMMU তে যেসব রোগী দেখা হয়
বন্ধ্যাত্ব
মাসিকের সমস্যা ( অনিয়মিত মাসিক, মাসিক না হওয়া, মাসিকে ব্যথা)
জরায়ুর সমস্যা ( fibroid, adenomyosis, endometriosis): জরায়ু অপসারন না করে অন্য উপায়ে চিকিৎসা
হরমোন জনিত স্ত্রীরোগ ( polycystic ovary syndrome, premature ovarian failure, abnormal pubertal development, disorders of sexual development etc)

Sunday, January 13, 2019

Reproductive Endocrinology and Infertility in Bangladesh

Reproductive Endocrinology and Infertility is an emerging gynae sub speciality in Bangladesh. The Department of Reproductive Endocrinology and Infertility at Bangabandhu Sheikh Mujib Medical University provides quality service at an affordable cost to a large number of infertile couples. The IVF program has not flourished mainly because of the high procedural cost. My job here as faculty is rewarded by the satisfaction of the patients and the legacy of postgraduate trainees.